পরিচালনা

সিকল সেল এবং থ্যালাসেমিয়া

হালনাগাদ করা হয়েছে 4 August 2022

1. স্ক্রিনিং করানোর উদ্দেশ্য

আপনি সিকল সেল বা থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করছেন কিনা এবং সেটি আপনার সন্তানের মধ্যে ছড়াতে পারে কিনা সেটি জানার জন্য।

সিকল সেল এবং থ্যালাসেমিয়া

2. এই রোগগুলো সম্পর্কে

সিকল সেল রোগ (এসসিডি) এবং থ্যালাসেমিয়া মেজর একধরণের মারাত্মক, বংশানুক্রমিক রক্তের সাথে সম্পর্কিত রোগ। শরীরে অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিন, যা রক্তের অংশ, সেটিকে এটি নষ্ট করে দেয়। যাদের এই রোগ রয়েছে তাদের সারাজীবন বিশেষজ্ঞ পরিচর্যা পাবার দরকার হবে।

এসসিডি-তে আক্রান্ত লোকজনেরা যে সব সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন সেগুলো হল খুবই মারাত্মক ব্যথা অনুভব করা, মারাত্মক জীবনবিনাশী সংক্রামণের ঝুঁকিতে থাকা আর তারা সাধারণত রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকেন (তাদের শরীরের অক্সিজেন বহন করতে অসুবিধা হয়)। শিশুরা আগে ভাগে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে, এর মধ্যে রয়েছে টিকা গ্রহণ ও অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, যা, পিতামাতার সহায়তার পাশাপাশি, তাদের মারাত্মক অসুখে ভোগার হাত থেকে রেহাই পেতে পারে এবং তারা একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে।

থ্যালাসেমিয়া মেজর থাকা লোকজন খুব বেশী রক্তশূন্যতায় ভুগেন এবং প্রতি ৩ থেকে ৫ সপ্তাহ পর পর তাদের রক্ত পরিসঞ্চালন (ব্লাড ট্রান্সফিউশন) করার দরকার হয় এবং সারাজীবন তাদের ইনজেকশন ও ঔষধ গ্রহণের দরকার হয়।

এছাড়া আরও অন্যান্য হিমোগ্লোবিনজনিত রোগ রয়েছে যেগুলো কম দেখা যায় ও ততোটা মারাত্মক নয়। সিকল সেল ও থ্যালাসেমিয়া হল একটি বংশানুক্রমিক রোগ যেটি রক্তের অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন জিনের মাধ্যমে পিতামাতার কাছ থেকে সন্তানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। জিনগুলো হল আমাদের শরীরের কিছু কিছু জিনিষের কোড যেমন চোখের রঙ ও রক্তের গ্রুপের মতন জিনিস। জিনগুলো জোড়ায় জোড়ায় কাজ করে। আমরা বংশানুক্রমিকভাবে যা কিছু পাই না কেন তার একটি জিন হল মাতার আরেকটি হল পিতার।

লোকেরা কেবল তবেই এসসিডি বা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হবেন যদি তারা দুইটি অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন জিন পান - একটি তাদের মায়ের কাছ থেকে আর অন্যটি পিতার কাছ থেকে। বংশানুক্রমে যারা কেবলমাত্র একটি অস্বাভাবিক জিন বহন করেন তারা ‘বাহক’ হিসেবে পরিচিত (অনেকে এটিকে ‘বৈশিষ্ট্য’ বলেন)। বাহকরা সুস্থ সবল হন এবং তারা এই রোগে আক্রান্ত নন, যদিও ক্ষেত্র বিশেষে তারা কিছু কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে তাদের শরীর যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন পায়না যেমন চেতনানাশক ঔষধ নেবার সময়।

যেক্ষেত্রে পিতামাতা উভয়েই বাহক হন সেক্ষেত্রে প্রতিটি শিশুর জন্য যা ঝুঁকি থাকে:

*প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন (২৫%) শিশুর আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে থাকবে না - শিশুটির রোগ থাকবে না বা সে এই রোগটি বহন করবে না। *প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন (২৫%) শিশুর ক্ষেত্রে সে অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন জিন ও হিমোগ্লোবিনজনিত অসুখ উভয়টিই পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেতে পারে। *প্রতি ৪ জনের মধ্যে ২ জন শিশু (৫০%) অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন জিন পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেতে পারে এবং একজন বাহক ও হতে পারে।

চিত্রণে দেখা যাচ্ছে যে যদি উভয় মাতা ও পিতা ক্যারিয়ার হন তাহলে ৪ এর মধ্যে ১ সম্ভাবনা আছে যে তাদের সন্তানের হিমোগ্লোবিন ব্যাধি থাকবে এবং ৪ এর মধ্যে ২ সম্ভাবনা আছে যে সন্তানটিও ক্যারিয়ার হবে আর ৪ এর মধ্যে ১ সম্ভাবনা আছে যে সন্তানটি প্রভাবিত হবে না।

ডায়াগ্র্যামে দেখা যাচ্ছে যে যখন উভয় জন্মদাতা মাতা ও পিতা যদি ক্যারিয়ার হন তাহলে তাদের শিশুর বংশানুক্রমে হিমোগ্লোবিন ব্যাধি থাকার কতটা সম্ভাবনা আছে

হিমোগ্লোবিনজনিত রোগের বাহক যে কেউ হতে পারে। তবে, এটি সাধারণত সেইসব লোকজনের মধ্যে দেখা যায় যাদের পূর্বপুরুষ আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলো থেকে এসেছেন।

3. স্ক্রিনিং পরীক্ষা

গর্ভকালীন সময়ে সিকল সেল ও থ্যালাসেমিয়ার স্ক্রিনিং টেস্টের জন্য রক্ত পরীক্ষার দরকার হয়। আপনার গর্ভধারণ সময়কাল ১০ সপ্তাহ হবার পূর্বে এই টেস্টটি করিয়ে নেয়া উত্তম।

গর্ভবতী সকল মায়েদেরকে থ্যালাসেমিয়ার টেস্ট করার জন্য বলা হয় তবে সকল মায়েদেরকে সাধারণত নিয়মিত সিকল সেল টেস্ট করার জন্য বলা হয় না। আপনি যে এলাকায় বাস করেন তার উপর নির্ভর করে এই স্ক্রিনিং টেস্টের প্রস্তাব করা হয়।

যে সব এলাকাতে হিমোগ্লোবিনজনিত রোগের আধিক্য সচরাচর বেশী থাকে আপনি সেই সব এলাকাতে বসবাস করলে আপনাকে এসসিডি’এর জন্য রক্ত পরীক্ষার করতে বলা হবে। যেসব এলাকাতে হিমোগ্লোবিনজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব কম থাকে সেখানে শিশুর মাতা ও পিতার পারিবারিক উৎস সনাক্ত করার জন্য একটি প্রশ্নমালা ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্নমালার মাধ্যমে যদি জানা যায় যে পিতা বা মাতার মধ্যে যে কোন একজন সিকল সেল বাহক হবার ঝুঁকিতে রয়েছেন তাহলে মাকে স্ক্রিনিং পরীক্ষা করতে বলা হয়। এমনকি আপনার শিশু পারিবারিক উৎসের কারণে হিমোগ্লোবিনজনিত রোগে আক্রান্ত হবার উচ্চ ঝুঁকিতে না থাকলেও আপনি একটি রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেবার অনুরোধ করতে পারেন।

4. পরীক্ষার নিরাপত্তা

স্ক্রিনিং টেস্টটি আপনার বা আপনার সন্তানের কোন ক্ষতি করবে না তবে এই টেস্টটি আপনি করবেন কিনা সেই সিদ্ধান্তটি ভেবেচিন্তে নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আপনার আরও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের দরকার হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পরবর্তীতে আপনাকে আরও কিছু টেস্ট করার জন্য বলা হতে পারে যেগুলোতে গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকতে পারে।

5. স্ক্রিনিং সম্পূর্ণভাবে আপনার পছন্দ

আপনাকে স্ক্রিনিং পরীক্ষাটি করতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কিছু লোকজন জানতে চান তাদের সন্তানের সিকল সেল বা থ্যালাসেমিয়া রোগ আছে কিনা আবার কিছু লোকজন সেটি জানতে চান না।

6. পরীক্ষা না করানো

গর্ভকালীন সময়ে আপনি স্ক্রিনিং পরীক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নিলে সেক্ষেত্রে শিশুটি সিকল সেল রোগে আক্রান্ত কিনা সেটি জানতে শিশুর জন্মের পর ৫ দিন বয়সের সময় তার ব্লাড স্পট স্ক্রিনিং টেস্ট করা হবে।

7. সম্ভাব্য ফলাফল

টেস্টের মাধ্যমে জানা যাবে আপনি বাহক কিনা বা আপনি নিজেই এই রোগে আক্রান্ত কিনা।

8. অধিকতর পরীক্ষা

আপনি যদি হিমোগ্লোবিনজনিত রোগের বাহক হন, তাহলে শিশুটির পিতাকে রক্ত পরীক্ষা করতে বলা হবে। শিশুটির পিতাও যদি বাহক হন তাহলে শিশুটি আক্রান্ত হয়েছে কিনা সেটি জানার জন্য আপনাকে একটি ডায়াগনস্টিক টেস্ট করতে বলা হবে।

শিশুটির পিতাকে যদি না পাওয়া যায় এবং আপনাকে একজন বাহক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাটি করতে বলা হবে।

প্রায় প্রতি ২০০ টি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার মধ্যে ১ থেকে ২টির (০.৫% থেকে ১%) ফলে অকালগর্ভপাত হতে পারে। পরবর্তী টেস্ট করাবেন কিনা সেটি আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। দুই ধরণের ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা রয়েছে।

সিভিএস (ক্রনিক ভিলুস স্যাম্পলিং) যেটি সাধারণত গর্ভধারণের ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়। সাধারণত সূক্ষ্ম একটি সূচ মায়ের পেটের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করিয়ে প্লাসেন্টা থেকে অতি ক্ষুদ্র একটি টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিকল সেল বা থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা সেটি জানার জন্য টিস্যু থেকে প্রাপ্ত কোষগুলোকে পরীক্ষা করা হয়।

এমিনোসেন্টিসিস সাধারণত গর্ভধারণের ১৫ সপ্তাহ পরে করা হয়। সূক্ষ্ম একটি সূচ মায়ের পেটের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করিয়ে মায়ের জরায়ু থেকে শিশুটিকে ঘিরে থাকা তরলের সামান্য একটু নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তরল নমুনাতে শিশুর কিছু কোষ থাকে যেটি পরীক্ষা করে জানা যায় যে তার সিকল সেল বা অন্য ধরণের থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা।

9. ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাগুলোর সম্ভাব্য ফলাফল

প্রাপ্ত ফলাফল থেকে যদি জানা যায় যে শিশুটির সিকল সেল বা থ্যালাসেমিয়া আছে তখন আপনাকে একজন স্বাস্থ্য বিষয়ক পেশাজীবীর সাথে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য প্রস্তাব দেয়া হবে। শিশুটি উত্তরাধিকার সূত্রে যে রোগ পেয়েছে সে ব্যাপারে আপনি তথ্য জানতে পারবেন এবং আপনার জন্য কী কী বিকল্প আছে সে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে পারবেন।

কিছু কিছু রোগ অন্যান্য রোগ থেকে মারাত্মক হয়। কিছু মায়েরা তাদের গর্ভধারণ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আবার কিছু মায়েরা সেটি না করে গর্ভপাত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আপনার ক্ষেত্রে এধরণের বিকল্প বেছে নেবার পরিস্থিতি আসলে আপনাকে এই রোগগুলোর বিষয়ে অধিকতর তথ্য দেয়া হবে এবং পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীরা আপনাকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবেন। সপোর্ট গ্রুপগুলো থেকেও তথ্য লভ্য রয়েছে।

টেস্টের মধ্য দিয়ে যদি জানা যায় যে আপনি একজন বাহক তাহলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও বাহক হবার ঝুঁকিতে থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়। আপনি তাদেরকেও একটি টেস্ট করিয়ে নেবার জন্য উৎসাহ দিতে পারেন বিশেষ করে তারা যদি বাচ্চা নেবার পরিকল্পনা করেন।

10. ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাগুলোর সম্ভাব্য ফলাফল পাওয়া

যিনি আপনার টেস্ট সম্পন্ন করবেন ফলাফল জানানোর ব্যাপারে তিনি আপনার সাথে আলোচনা করবেন।

11. এই প্রচারপত্রের বিষয়ে

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (PHE) এই প্রচারপত্রটি তৈরী করেছে NHS-এর পক্ষ থেকে

*{এসসিডি}: সিকল সেল ও থ্যালাসেমিয়া *{সিভিএস}: কোরিঅনিক উইলস স্যাম্পলিং